বুক রিভিউ
শ্রাবণের কত রাত কেটেছে তোমার চোখের পানে চেয়ে, ভরা পূর্ণিমায় তোমার চোখে দেখেছি চাঁদের লুকোচুরি খেলা। শীতের রাত। এমনি করেই বুঝি ভালোবাসার বাহুবন্ধনে জড়িয়ে যায়। সবাই মানুষের জীবন একটি রঙ্গমঞ্চ। যেখানে ঘিরে থাকে অনন্ত ভালোবাসার স্বর্গ, ঘিরে থাকে সভ্যতার তাবৎ বিস্ময়। মানুষকে ঘিরে আবর্তিত হয় সমস্ত কেচ্ছা কাহিনি। এরই মধ্যে মোড়া আছে প্রণয়ের ব্যর্থতা, আনন্দ ও অশ্রুতে ভেজা অথবা সূর্যরাঙা সুবিস্তৃত পথ। সারিকা আর সাগর চরিত্রকে ভর করে এগিয়েছে কথাসাহিত্যিক নিশাত ইসলামের 'অন্তরে শুধু তুমি' উপন্যাসটি। চমৎকার হওয়ার মতো ভাষাবিন্যাস ও কাহিনির নতুনত্ব দেখা যায় প্রতিনিয়ত বাঁকবদলে। ফলে পাঠকের কাছে নিশাত ইসলাম রচিত এ বই আলোকময় হয়ে উঠবে বলে মনে করি। উপন্যাসটি পাঠকের মনে দীর্ঘস্থায়ী আসন গেঁড়ে নেবে বলে বিশ্বাস করি। বইটি প্রকাশ করেছেন অনন্যা। মুদ্রিত দাম ২০০ টাকা।
গল্পটি নিতুর। গল্পটি এক ভবঘুরে রাজকণ্যার, যার সবসময়ের সংগী বডিগার্ড জামাল উদ্দিন।গল্পের নায়িকা নিতু নামক রাজকণ্যা তার রাজ্য,রাজা(তার বাবা)কে ছেড়ে বাড়ি থেকে পগারপান হন।লেখিকা নিশাত ইসলাম গল্পের নায়িকাকে সমস্ত শহর ঘুড়িয়ে এনে ফেলেন হাঁটাবাবার আস্তানায়।সেখানে কেমন দিন কাটে রাজ্য ফেলে আসা রাজকণ্যা নিতুর তা লেখক কাহিনিকারে বর্ণনা করেছেন অত্যন্ত গুছিয়ে এবং রহস্যের মোড়কে মুড়িয়ে।গল্পের প্রয়োজনে জন্ম নিয়েছে ধীরে ধীরে রহস্যজনক কিছু চরিত্র।আর গল্পের শেষে টুইস্ট আকারে পাঠককের মনে ধাঁধাঁর জন্ম দিয়েছে হাঁটাবাবার পরিচয়।
কে আসলে এই হাঁটাবাবা।কি ঘটছে প্রতিনিয়ত তার আস্তানায়, জানতে হলে অবশ্যই পড়া উচিৎ অন্বেষা প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত নিশাত ইসলামের রহস্যে ঘেরা উপন্যাস "নিতু এবং হাঁটাবাবা।"বইটির মুদ্রিত মুল্য মাত্র ২৪০ টাকা।প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর।
সত্যি বলতে আমি যখন এই বইটি পড়তে বসেছি, তখন এর কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ভাবছিলাম, আমি কোনো ঘুরের মধ্যে আছি। বেশ কয়েকটি পাতা পড়ার পর,আমার আগ্রহ বাড়তে লাগলো বাকি পাতা গুলো পড়ার জন্য। এই বইটি মূলত ১৮ বছরের একটি মেয়ে এবং এক রিকশা চালকের, যাকে মানুষ বোমা মফিজ বলে জানে।যাকে নিয়ে পুরো বই জুরে কথা। এবং এই ১৮ বছর বয়সী মেয়েটা কতো খারাপ মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে এসেছে।
তার ভিতর অনেক গুলো টুইস্ট ও আছে ।যেমন,তার বড় হয়ে উঠা এবং সে কিভাবে রিকশা চালক হলো,আবার তাকে মানুষ বোমা মফিজ বলেও ডাকে এবং ভয় পায়।মূলত সে থাকে চোর, চোর হয়েও সে কিভাবে নিজের সবটুকু দিয়ে কাউকে ভালোবাসে। এখানে সে, খারাপ হয়েও সে নারীর কথা ভুলে, একজন মানুষকে ভালোবেসেছে।আমি যতো বইটি পড়ছিলাম ততই অবাক হচ্ছিলাম এবং হারিয়ে যাচ্ছিলাম। এই বইয়ের কথা গুলো এমন ভাবে মনে গেঁথেছে যে, ইচ্ছে করছে পুরো কাহিনিটা আপনাদের সামনে তুলে ধরি।কিন্তু, আমি সেটা করতে চাচ্ছি না। কারণ, আমি চাই আপনারা যারা বই পড়তে ভালোবাসেন, তাঁরা বইটি পড়েন এবং ফিল করেন। তার ভিতরের বাকি টুইস্ট বুঝতে হলে আপনাকে এই বইটি পড়তে হবে।বইটি পড়তে পড়তে আপনি ভাবতে পারেন,যে বইটি কোনো স্বাভাবিক মানুষ লিখেন নি, সবসময় কল্পনার জগতে থাকে এমন কেউ লিখেছে। ব্যক্তিগত ভাবে বইটি আমার খুব ভালো লেগেছে। তাই ছোট করে রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করলাম। তবে, বইটির শেষের পাতায় আসার পর,আমার মতো আপনিও মনে মনে বলবেন, আরো ২ পাতা থাকলে ভালো হতো।
‘মায়া’ বইটি পড়ে শেষ করলাম। বইটি পড়ার প্রতি আগ্রহবোধ করেছি, নামটি দেখেই। পৃথিবীর সবকিছু মায়া। আর এ মায়াকে একমলাটে লিখেছেন, নিশাত ইসলাম।
পৃথিবী এক মায়া। সেই মায়াজালে একবার ফেঁসে গেলে বের হওয়া অসম্ভব। ধীরে ধীরে মায়ায় আবদ্ধ হতে থাকি। এর যেন কোনো সমাপ্তি নেই। আদি-দিগন্ত নেই। এ রকম কাহিনিনির্ভর বইটি।
‘...সব খুশি সেদিন ছিল-
শুধু আমাকে একাই ঘিরে!
ধীরে ধীরে শুরু হল আমার পথচলা,
কত মানুষ হাত ধরেছিল-
প্রথম যেদিন একপা দুপা করে আমার এগিয়ে চলা।
শিক্ষার আলোতে আমার চারিপাশ-
মা-বাবা আলোকিত করেছিল অনেক আদরে ভালবেসে।
জীবনের যত চাওয়া পাওয়া সব-
বন্দী তাদের কাছে,
কত আব্দার কত ভালবাসা-
সবই ছিল তাদের ঘিরে।
চলতে চলতে চলে গেল অনেক বছর,
মায়াতে বেঁধেছ আমায় তোমরা সকলে।
কত বন্ধু পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন-
তোমাদের সাথে সময় গুলো পার।
হাসি খেলা, আনন্দ বেদনা-
সব কিছু যেন এখানেই তোমাদের সাথে,
কত মায়া কত ভালবাসা তোমাদের কাছে।
বহুদিন পর আজ আমি বৃদ্ধ-
এখন বুঝি তোমাদের কাছে বোঝা হয়েছি?
সব কিছু বদলে গেছে মনে হয়!
সোনালী সেই দিন গুলো এখন আমার আর নেই।
কত অবহেলা অযতনে-
রয়েছি বন্দী অন্ধ ঘরের কোণে!...’। এটি একটি কবিতার উদ্ধৃতি। এ বইটি পড়তে পড়তে বারবার কবিতার কথাই মনে পড়ছিল। লেখকের লেখায় কাব্যিকতা রয়েছে। আলাদা ভাষাশৈলী রয়েছে। নিজস্ব স্টাইলে বই সাজিয়েছেন। তার বই বেশ। তবে আমার পড়া রয়েছে এ নিয়ে তিনটি। সময় বড় কঠিন, একে আটকে রাখা যায় না। লেখক তার সময়কে আটকে ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার লেখনীতে একবিংশ শতাব্দীর যে চিত্র, আবহ তা স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়।
তার কাজ হয়তো লিখেই যাওয়া। এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মায়া-শুভ। সমাজের ভেতরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে চরিত্র দিয়ে চিত্রিত করেছেন তিনি- ‘দ্বিতীয় মাসের পিরিয়ডের সময় ডাক্তার বলে দিয়েছেন পাঁচ/ছয়/সাত দিনের যে কোনো এক সময় এইচজিসি নামের একটা টেস্ট করাতে হবে। এই টেস্টের মাধ্যমে জানা যাবে মায়ার জরায়ুর কি অবস্থা। এটা এক ধরনের এক্স-রে। মায়া একাই চলে এসেছে এই টেস্টটি করাতে। আগেও এক্স-রে অনেক কারণে করেছে, তাই তো ভয়ের কিছু নেই। টাকা জমা দিয়ে এক্স-রে রুমে এসে মানিরিসিট ধরিয়ে দিতেই নার্স কয়েকটা ওষুদের নাম রিখে দিয়ে নিয়ে আসতে বললেন। মায়ার মনে প্রশ্ন জন্মাল এক্স-রে করতে এসব ওষুধ তো লাগার কথা নয়, এটা কী ধরনের এক্স-রে?...’
‘মায়া’ উপন্যাসটি মূলত একজন অনাগত সন্তানের প্রতি যে মায়াবোধ তৈরি হয় তার আদলে লেখা। উপন্যাস থেকে ‘... বিয়ের পর আমার কনসিভ করেছিল। ওরা আমার...
কান্নায় আটকে গেল কথা। কথাগুলো আটকে গেলেও মায়া ঠিক বুঝতে পেরেছে ‘ওরা’ মানে ভদ্রমহিলার স্বামীর পরিবারের লোকজন হয়তো সে-সময় বাচ্চা চায়নি। আর ‘আমার’ কথার মানে হলো, আমার বাচ্চা জোর করে হত্যা করা হয়েছে। ভদ্রমহিলা স্বামীর দিকে তাকালো তার মধ্যে অনুতপ্তের লেশ লেগে আছে বোঝা গেল...’!
নিশাত ইসলামের উপন্যাসে সবচেয়ে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সেটি হলো মানবিকতার পরিচয়। তিনি একজন মানবিক মানুষ হিসেবেই নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে অনেকেরই হয়তো মনে হবে, এটি আমারই জীবন।
মানুষ যখন তার জীবনকে কোনোকিছুতে খুঁজে পায়, তখন সেটিই বড় পাওয়া। সে হিসেবে এটি একটি বড়প্রাপ্তি।
লেখিকা নিশাত ইসলামের ব্যানারে বইমেলা ছেয়ে থাকে। তেমন কোনো বই তার পড়া হয়নি। এবার একটি বই মনোযোগ দিয়ে পড়া শুরু করলাম- মনে পড়ে তোমাকে। নামটি বেশ প্রেমে ভরপুর। প্রকাশ করেছে অনন্যা প্রকাশনী। প্রকাশকাল ২০২১।
বইটির চরিত্র সুরভীকে যেভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে, তা আমাদের সমাজের প্রায় প্রতিটির নারীর চরিত্র। প্রেম একটি দ্বিধাহীন শব্দ। এর কোনো নির্দিষ্ট রঙ নেই, ভাষা নেই। এর কোনো কাঁটাতার নেই। ভেবেচিন্তে সিন্ধান্ত নেওয়ার মতো অবস্থা নেই; কিন্তু মানুষমাত্র প্রেমে পড়েন। প্রকৃতির প্রেম, শহরের প্রেমে- একে-অপরের প্রেম।
‘মনে পড়ে তোমাকে’ উপন্যাসে লেখিকা সুরভীর আর্তনাদকে ফুটিয়ে তুলেছেন। কখনও তার মনে হয় নীল হয়তো সব ভুলে গিয়েছে। আবারও কখনওবা মনের কোনো এক কোণে লেগে থাকে আবেগের শেষটুকু। হয়তো নিজের অজান্তেই নিজেকে সান্ত্বনা কিংবা ভুলের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করা। ভুল সান্ত্বনায় নিজেকে নিমজ্জিত করা। এভাবেই শুরু হয়েছে উপন্যাসের পথচলা।
সাবলীল শব্দচয়ন। টেনে নেওয়ার এক অভাবনীয় যোগ্যতা রয়েছে লেখিকার। শেষঅব্দি টেনে নেওয়ার ঘোর না কাটলেও, শেষ করেছি এটুকু ভাবতে হবে।
হারানোর যন্ত্রণা এবং সেটি মানতে না পারার যে ব্যথা তা যে বা যিনি হারিয়েছেন তিনিই উপলব্ধি করতে পারবেন। হয়ত নিশাত ইসলামের কল্পনাশক্তি প্রখর হওয়ার কারণেই এ রকম মননজগতে স্পষ্ট করতে পেরেছেন।
হারিয়ে যাওয়ার পরও একে-অপরকে মনে হবে কোনো একদিন তুমি আমার হবে। সুরভি এ স্বপ্নটা তুমিও কি দেখ? জানি দেখ না। দেখলে হয়তো তোমার আর আমার মাঝে পাহাড় আর সাগরের সমান দূরত্ব বাড়ত না। এসব চিন্তা একে-অপরের জগতে ঘুরপাক খাবে।
উপন্যাস থেকে ‘চাঁপা হাসিদের বাড়ির উঠানে এসে দাঁড়াতেই কৃষ্ণচূড়া গাছের গন্ধ নাকে লাগল। গাছের সাথে নিজের মাথা ঠেকাতেই সুরভির গায়ের ঘ্রাণও নাকে এসে লাগল। চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল, সুরভি কেমন আছ তুমি? হয়তো আমার ওপারের ডাক এসে গেছে। আর বেশিদিন কষ্ট দেব না। আমার মৃত্যুর খবর জানার পর তুমি ভুলতে পারবে সহসায়। জীবিত জেনে হয়তো কষ্ট পাচ্ছ। আমি যতদিন নিঃশ্বাস নেব ততদিন তুমি সুখী হতে পারবে না।
চাঁপা নীলের পিঠে হাত দিতেই চোখ মেলে হাসতে চেষ্টা করল। শুকনো মুখে হাসিটা ফোটাতে পারলো না। চাঁপা বলল,
কেন আসো গ্রামে?
স্মৃতিগুলোকে স্পর্শ করতে।
কী পাও তাতে কষ্ট ছাড়া?
কষ্টগুলোর মাঝেও সুখ আছে। যেটা আমি ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না।...’
এ থেকেই লেখিকার গ্রাম-বাংলার চিরায়ত দৃশ্যের প্রতি প্রেমের প্রকাশ ঘটে। সাহিত্যকে সবসময় কাঠখোট্টা হিসেবে ফুটিয়ে তোলা যায় না। যেমন : শুধুমাত্র বিপ্লবী যুদ্ধ, দেশমাতৃকাকে জয় করার যুদ্ধ বর্ণনা করে উপন্যাস বা গল্প রচিত হতে পারে না। এর সাথে কল্পনার মিশেল লাগে, যে কল্পনাকে আবার বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে নিতে হয়, পাঠকের ভেতরের জগতে প্রবেশ করার জন্য একটি চরিত্রকে আঁকড়ে ধরে আগাতে হয়।
‘নীল চলে যাওয়ার পর সুরভি আবারও ঘরবন্দি হয়ে পড়ল। ওকে হাসনাতের বাসায় নেওয়া হয়নি। কারণ ও করোনা রোগী স্পর্শ করেছে। চৌদ্দ দিন কোয়ারেন্টিন করে তবেই ফিরতে পারবে। ও কারও সাথে কথা বলে না, খায় না। একজন মানসিক ডাক্তার দেখানো হয়েছে। হয়তো সুরভি সেরে যাবে। যদি সেরেও যায়, কোনো এক অবেলায় নীলকে ঠিক মনে পড়বে। মনে পড়বে ওর চোখ, মনে পড়বে ওর গানের সুর, যা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আর যদি সেরে না যায় তাহলে পরপারে ঠিক নীলের সাথে দেখা হবে। নীলের কথা যদি ঠিক হয় তবে আবার ওদের জন্ম হবে...।’
বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক E. M. Forster- এর মতে, কমপক্ষে ৫০ হাজার শব্দ দিয়ে উপন্যাস রচিত হওয়া উচিত। উপন্যাস সাহিত্যের এমন একটি মাধ্যম যেখানে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার অবকাশ থাকে। এখানে লেখক প্রাণখুলে তার মতামত লিপিবদ্ধ করতে পারেন বা একেকটি চরিত্রকে প্রস্ফুটিত করতে পারেন সকল ধরনের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে। সে হিসেবে নিশাত ইসলাম আপাতদৃষ্টিতে অতিক্রম করেছেন সীমা।
একটি মানবিক প্রেমের উপন্যাস। এর ভাষার মান, আখ্যান সবকিছুই পাঠকের মন ছুঁয়ে যাবে। বাজারে সাধারণত যে ধরনের রমরমা প্রেমের হাট বসানো হয়, এ বইটি সে রকম নয়।
সুফিয়া খালার ব্যবহারে বুঝতে পারলাম এবার বাড়িতে জায়গা নেই। দৌড়ে পগারপার হতেই সামনে কয়েকজন টহল পুলিশ পড়ে গেল। আমার গালে জোরে এক চড় কষে বলল, তোকে যেন এই এলাকায় না দেখি। আমি নিজের গালে হাত দিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। কান ঝিনঝিন করছে। আমার অপরাধটা বুঝতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করার মত সাহসও নেই। অন্য গালে আর এক চড় বসিয়ে দিলে দুকানই বন্ধ হয়ে যাবে। টহল পুলিশ নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, স্যার মালটা চালান করে দেব না-কি?
আরে না মাগি ছাওয়াল, শেষে বিপদে পড়ে যাব। ধ্যান করছি পৃথিবীর সব ভুলে হাঁটাবাবার দর্শন পাবার জন্য। ধ্যান করছি... আমার ধ্যানের মধ্যে হাঁটাবাবা দর্শন দিল। বিশাল বড় একটা মশার পিঠে চড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলছেন, নিতু। জি, হাঁটাবাবা। তুই একটা বিশাল মশা হয়ে যা। আমি তোর পিঠে চড়ে পৃথিবী ঘুরব।
সবাই দৌড়ে এলো আমার কাছে। আমার গলায় সাপ পেঁচানো আর ফণা তুলে আছে মাথার উপর। মানুষের ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন সিঁদুর পরা মহিলা আমার সামনে এসে মাটিতে নিজের মাথে ঠেকিয়ে বললেন, জয় বাবা মহাদেব, জয় শিবও সম্ভু, হর হর মহাদেব। মহাদেব কি আমার ওপর ভর কছে? নানা রহস্যময়তা পাঠক নিয়ে যাবে উপন্যাসের ভেতর। নিজে একাত্ম হয়ে উপন্যাসের চরিত্রের মধ্যে। রোমাঞ্চকর কীর্তিকলাপ এ নির্মাণ করেছেন উপন্যাসের শরীর। লেখক দারুণ
মুন্সিয়ানা দেখিয়েন চরিত্র নির্মানে। সহজ সাবলীল বাক্যে দরদ মেখে অনুসন্ধানী চোখে চিত্রায়ন করেছেন সমাজের নানান অসংগতি। জনপ্রিয় ধারার কথাসাহিত্যিক নিশাত ইসলাম। তার উপন্যাস এক নিমিষে পড়ার মত। কোথাও অতিকথন নেই।
একশ ছত্রিশ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য রাখা হয়েছে দুইশত চল্লিশ টাকা। প্রচ্ছদ শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগর।
নষ্ট জীবনের কষ্ট’ কথাসাহিত্যিক নিশাত ইসলামের একটি অনন্য উপন্যাস। মধ্যবিত্ত পরিবারের নানামুখি চড়াই-উৎরাই নিয়ে লেখা। তিলোত্তমা শহরে শুধুমাত্র পেটের দায়ে মেয়েরা হয়ে ওঠে কামুক পুরুষের লালসার বস্তু। নিজেকে পণ্য করে তোলে কেউ কেউ। সোনালি রোদ্দুরের হাতছানি, নিয়ন আলোয় নিজেকে ভাবিয়ে দেওয়া মায়ের গল্প মেয়ের গল্প। নামের আড়ালে না হারিয়ে যায়। এ শহরে হাজারও জুঁইয়ের কাহিনি উঠে এসেছে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র জুঁইয়ের মধ্য দিয়ে। জীবন ও যৌবনের মাতাল সময়ে রঙিন দুনিয়ার হাতছানি ‘বোতলটা খুলতেই জিহ্বায় পানি চলে এলো লাবু সাহেবের। জুঁইয়ের সামনে গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বোতল থেকে ভদকা ঢালল। ভদকার গন্ধে ওর শরীর শিরশির করে উঠল। ভদকা ওর ভালো লাগে না, তবুও ওদের সাথে অ্যাক্টিং করতে হয়। গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে হাসলো এক গাল।
জুঁই নামের মেয়েটি ভারি সুন্দর। গোলাপের মতো নরম কোমল ঠোঁটে হাসি লেগে থাকত সব সময়। ওর মায়াবি চোখের ভাষা আর আকর্ষণীয় ফিগারের দোলায় ব্যাকুল হয়ে উঠত প্রেমিক। কিন্তু এই চঞ্চল হরিণী ধরা দিত না কারও কাছে।
হঠাৎ একটা দুর্ঘটনা ওর জীবনটাকে এলোমেলো করে দিল। থমকে গেল ওর জীবনের সুন্দর দিনগুলো। পা বাড়ালো অন্ধকার পথে। অন্ধকারের পথ ধরে ও হেঁটে চলল বহু দূর...’
পাঠকের ভালো লাগবে এমন একটি সামাজিক উপন্যাস ‘নষ্ট জীবনের কষ্ট’। ১৯২ পৃষ্ঠার বইটির নান্দনিক প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। প্রকাশক : অনন্যা।
‘মেয়েটি বোরকা খুলে পাশে এসে বসল। টেবিল ল্যাম্পের আলো এসে পড়ল মেয়েটির চেহারায়। আলোর হালকা আভায় মেয়েটিকে বেশ লাগছে। জিজ্ঞেস করল, কিসে পড়। ফাস্ট ইয়ারে। বাবা-জানে? না। কেন এসেছ? হাত খরচের জন্য। হাত খরচের জন্য এসব করছ?’
যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখ-যন্ত্রণা নিয়ে সামাজিক উপন্যাস ‘তবুও ভালোবাসি’। সমাজ সংসার সময় মানবজীবনের বাকবদলের চিত্র ণিপুন হাতে তুলে এনেছেন কথাসাহিত্যিক নিশাত ইসলাম। বইটির পরতে পরতে রয়েছে মানব মানবীর জানা না জানা নানান অধ্যায়। তিনি চিত্রিত করেছেন আপন মহিমায়। ইট পাথরের কঠিন মায়াময় শহরের মানুষ, তরুণ প্রজন্মের জীবনাচার, কোন পথে হাঁটছে তারা। কেন স্বপ্নালোকিত তরুণেরা স্বপ্নগুলো বিসর্জন দেয় এইসব খুটিনাটি বিষয় কথাসাহিত্যের কলাকৌশলে উঠে এসেছে।
ভালোবাসার মায়াজালে আটকে যাওয়া মানব মানবীর মুখের বয়ান তোমাকে ভালোবেসে অনন্তকাল অপেক্ষা করতে রাজি। যদি কখনও বৃষ্টির দিনে কদম ফুল হাতে এসে দাঁড়াও আমার মনের দরজায়। ব্যকুল হৃদয় লুফে নেবে সে ভালোবাসা। আকাশে অনেক মেঘ জমা রেখেছি তোমার বিরহে এক পসলা বৃষ্টিতে, কখনও এলে ভিজিয়ে তোমাকে শোনাব মেঘের গর্জন, বৃষ্টির গান। রোদের খরতায় শুকিয়ে যাবে চোখের কোণায় জমে থাকা অশ্রু, অবুও তোমার স্বপ্নে বিভোর হয়ে কেবল তোমাকেই ভালোবাসবে এই মন। তুমিহীনা চাই না পৃখিবী কেবলি পানসে, কেবলি ধুসর। চাই না স্বর্গলোক, তুমিহীনা আমিতো একা, কেবলি একা। তোমাকে ভালোবাসি, তবুও ভালোবাসি জন্ম থেকে জন্মান্তরে। শুধুই ভালোবাসি। একটি সার্থক উপন্যাস। বই পাঠে পাঠক মনের তৃষ্ণা মিটবে বলে মনে করি। নান্দনিক ছাপা, বাঁধাই। বইটি প্রকাশ করেছে স্বনামখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অনন্যা।
আলো-বাতাশের মুখ দেখা হয়নি অনেকদিন। কখন রাত আসে, কখন দিন হয় সেটা হয়তো বুঝতে পারি। কিন্তু আলো-বাতাস, অন্ধকার-চাঁদের আলো, জোনাকি রাত কিছুই টের পাই না। অসুভুতিতে এসব খেলা করে, মৃদু বাতাস বয়ে যায়। আবার যখন বাস্তবে ফিরে আসি আমি খাঁচাবন্দি। রুম আর বাথরুমে পার্থক্য নির্ণয় করতে আমি ব্যর্থ...। ‘সাধারণ কয়েদির জন্য জেলখানায়’ ইলিশ ফাইল আছে। ফার্মের মুরগির মতো গাদাগাদি জীবন-যাপন। নেশার কারণে জীবনে জেলখানায় কোন কোন তরুণ আটকা পরে। নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করে। তখন সোনালি অতীত রোমান্থন করে। কেউ কেউ ফিরে আসে সাধারণ জীবনে। খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক নিশাত ইসলামের উপন্যাস ‘রানাভাই এখন রিহ্যাবে’ এমন একটি সামাজিক উপন্যাস। আছে প্রেম ভালোবাসা রোমাঞ্চ। সমাজের অসংগতি তুলে এনছেন ণিপুন কারিগরের মতোই। প্রচ্ছদ শিল্পের আচার্য ধ্রুব এষের নান্দনিক প্রচ্ছদে বইটি প্রকাশ করেছে অনন্যা। প্রকাশক: মনিুরুল হক। ১১২ পৃষ্ঠার ঝকঝকে অফসেট পেপারে মুদ্রণে হার্ডকভার বাঁধাইয়ে বইটির মূল্য দুইশত পঁচিশ টাকা। পাঠক বইটি পাঠে ডুবে জীবনের বাঁকে বাঁকে আলো-আঁধারীর ভেতর।
কেমন আছ সুরভি? আমাকে কি মনে পড়ে?এখনও কি আমার শরীরের গন্ধ খোঁজো বাতাসে?
জানি ভুলে গেছ হয়তো সব। তবুও কেন জানি আমার মনে হয় তুমি ভুলে যাওনি। আমি এ বিশ্বাস করে বেচে আছি,যা কিছু তোমার আমার মধ্যে দূরত্ব বাড়াচ্ছে তা নিছক একটা স্বপ্ন।সুরভি এ স্বপ্ন কি তুমিও দেখ?জানি দেখ না।দেখলে হয়ত আজ আমাদের মাঝে এ দূরত্ব এতো বাড়ত না।
সুরভি স্বামীর সংসারে আর দশ গৃহীনিদের মত নিজের মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে মানিয়ে চলার চেষ্টা করছে।কিন্তু প্রথম প্রেম আর জীবনের প্রথম পুরুষকে সেও ভুলতে পারেনি আর কোন দিন পারবেও না।
সুরভি শহরের মেয়ে। স্কুলের গ্রীষ্মকালীন গ্রামে মামার বাড়িতে বেড়াতে গেলে নীলের সাথে তার পরিচয় হয়। নীল এ গ্রামেরই হিন্দু স্কুল মাস্টারের ছেলে। নীল খুব সহজ সরল আর দয়ালু ছেলে।যা সুরভিকে মুগ্ধ করে। চাঁপা আর হাসি সুরভির মামাতো বোন। ওরা সুরভিকে নিয়ে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় সাথে নীল ও। নীল ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় গ্রামের মুসলমান ছেলেদের সাথে নীলের তেমন খাতির ছিল না। সুরভি প্রথমবার বেড়াতে গিয়ে নীলের প্রেমে পড়ে যায়। নীল সুরভিকে হিজল শাপলার ফুল তুলে এনে দেয়। আবার রাতের বেলা চুপিসারে জোৎস্নার আলোতে দুজনে অবিসারেও যায়। চাপা সব জানত ও দুজনকে সাহায্য করত।
প্রথমবার নীলকে না জানিয়ে অসুস্থতার জন্য যখন সুরভিকে শহরে চলে যেতে হয়েছিল তখন চাঁপায় ওদের কে মোবাইল এ কথা বলার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। এদিকে ছেলের পরিবর্তনের খবর নীলের মা বুঝতে পেরেছিল।ধর্মের নানা রীতিনীতি সামাজিক বাধ্য-বাধকতা শুনিয়েও নীলকে কোন ভাবেই ফেরাতে পারছিলনা সুরভির প্রেম থেকে। অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে সুরভির মা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসলে পুজা রাণী সরাসরি নীল আর সুরভির সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেয়।এই সম্পর্ক যে সমাজ কোন ভাবেই মানবে না তাও বলে দেয়। সুরভির মা কোন উপায় না পেয়ে স্বামীর সাথে আলোচনা করে তাদের পছন্দের বএিশ বছরের উপযুক্ত ছেলের সাথে বিয়ে দেয় সতের বছরের সুরভিকে। নীলকে নিজের বাড়িতে বন্দি রেখে সুরভির বাবা এই মহৎ কাজ সম্পাদন করেন।
বিয়ের দু বছর পর সুরভি জানতে পারে নীল মেডিকাল প্রথম বর্ষের ছাত্র । নীলের বাবা মা উভয়ই মারা যায়। মেডিকেলে চান্স পেলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি নীল। যাযাবর এক জীবন যাপন করছিল নীল। নীল নিজেকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিল। তবুও যদি সুরভি নীলকে ভুলে সংসারে মনোযোগি হয়। অবশেষে নীল করোনায় আক্রান্ত হয়ে গ্রামে গিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জোড়াদিঘির পাড়ে। যেখানে সে সুরভিকে কথা দিয়েছিল একসাথে আজীবন পথচলার। নীলের অসুস্থতার খবর শুনে গ্রামে পালিয়ে এসেও নীলের জীবিত মুখ আর দেখা হলোনা সুরভির। আবারও বিচ্ছিন্ন এক জীবন শুরু হলো সুরভির যে জীবনে শান্তির কোন ছোঁয়া নেই বিন্দুমাত্র। হয়তোবা নীলের এই বিশুদ্ধ ভালোবাসা জন্ম নিবে অন্য কোন রুপে।
সমাজের নানা অসমতা, কুসংস্কার আর ধরমান্ধ মানুষদের বিপর্যয় কে তুলে নানা চরিএ চিএায়নের মাধ্যমে। গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য গুলো সুন্দর আর সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন এই উপন্যাসে। যদিও উপন্যাসের শেষাংশ বেদনা বিধুর কিন্তু এটিতে প্রেমের উপাখ্যানের ও কমতি নেই। হাসি, কান্না সবমিলিয়ে উপন্যাসটি আমাদের কাছে উন্মোচন করেছে এক নতুন সমাজ সংসকরণের দিগন্ত। মনে পড়ে তোমাকে বইটি প্রকাশ করেছেন অনন্যা প্রকাশনী। দাম ৩৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেনঃ ধ্রুব এষ।
Previous
Next
সকল বই ক্রয় করতে এখানে CLICK করুন